খালি গলায় শ্রেয়া ঘোষালের গান গেয়ে তাক লাগাল বিখ্যাত রানু, ঝড়ের গতিতে ভাইরাল ভিডিও

কথায় আছে প্রতিভা থাকলেই তারা যে কোনো মুহূর্তে, যে কোনো ভাবে প্রকাশিত হবে। কুঁড়েঘর কিংবা অট্টালিকা সবখানেই রয়েছে প্রতিভা। প্রতিভা কখনো প্রতিপত্তি কিংবা জাতপাত দেখে হয় না। এমনই এক প্রতিভার অধিকারী হলেন রানাঘাটের রানু মন্ডল। অভাব-অনটন এবং দারিদ্রতায় ঘেরা তার সংসার। রানাঘাট স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে গান গেয়ে দু’পয়সা রোজগার করতে।

সেই রানাঘাট স্টেশনে তাকে সুযোগ করে দিল জনপ্রিয় হওয়ার। পথচলতি মানুষদের গান শুনাতেন। হঠাৎই এক পথচলতি যাত্রীর চোখ হয়ে পড়লেন তিনি। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার প্রতিভাকে সকলের মাঝে তুলে ধরার জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। তারপর এই মুহুর্তের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল লতা কন্ঠে রানু মন্ডলের ‘এক পেয়ার কা নাগমা হে’ গান।

তারপরেই ডাক আসে মুম্বাই থেকে।  ভবঘুরে থেকে টিকিট পেলেন সোজাসুজি মুম্বাইয়ে পাড়ি দেওয়ার। মুম্বাইয়ের এক রিয়েলিটি শো মঞ্চে গান গেয়ে মন জয় করলেন সংগীত পরিচালক তথা সংগীত শিল্পী হিমেশ রেশামিয়ার। তারপরেই ধীরে ধীরে ভাগ্যের চাকা ঘুরল তার। প্লে-ব্যাক সিঙ্গার হয়ে উঠলেন হিমেশ রেশমিয়ার দৌলতে। তার সাহায্যে তেরি মেরি কাহানি গান গাওয়ার সুযোগ পান রানাঘাটের রানু মন্ডল।

এর থেকে ভালো অর্থ উপার্জনও হয়েছিল। পারিশ্রমিক হিসেবে সাত লক্ষ টাকা পেয়েছিলেন রানু মন্ডল। তারপর থেকেই বদলে গেল তার হাবভাব। অহংকারে আত্মহারা হয়ে উঠলেন তিনি। সৌজন্যবোধ ভুলে গেলেন। আর এই অহংকার ফের তাকে তার জীবনে পতনের দিকে ঠেলে দিল। এমনকি অনুরাগীরা তার সঙ্গে একটা সেলফি তুলতে চাইলেও তিনি রেগে তাদের সাথে দূর ব্যবহার করতেন।

তার এই ব্যবহারে তিত বিরক্ত হয়ে উঠেছিল সকলে। জীবন থেকে হারিয়ে ফেলেছিলেন সবকিছুই। ফিরে আসতে হয়েছিল রানাঘাটের ছোট্ট কুটিরে।  যেখান থেকে শুরু করেছিলেন সেখানেই তার জীবন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জনপ্রিয়তার খাতিরে সবসময়ই রানু মন্ডল কে নিয়ে নেটিজেনদের বেশ উত্তেজনা। তিনি কেমন আছেন, কি করছেন তা জানার আগ্রহ প্রত্যেকেরই।

এই আগ্রহকে নিরসন করার জন্যই প্রায়শই ইউটিউবাররা তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। ভিডিও শুট করে নিয়ে আসেন। দু-চার কথা বলে তার বর্তমান পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করেন। সেই সুযোগে তার কাছ থেকে গান শোনাও হয়ে যেত। সম্প্রতি এমনই এক ইউটিউবার তার বাড়িতে গিয়ে হানা দিয়েছিলেন। কথায় কথায় তার বর্তমান পরিস্থিতির কথা জিজ্ঞাসা করেন।

সর্বোপরি তার বাড়িতে যখন গিয়ে হাজির হয়েছিলেন তখন তার থেকে কোন ভাবে গান শোনাটা মিস করেন নি। লাল রঙের পোশাকে কাঁধে একটি গামছা নিয়ে সুরেলা কণ্ঠে ফুরফুরে মেজাজে গান গেয়ে উঠলেন রানু মন্ডল। ‘ঢাক বাজা কাঁসর বাজা’ গান গেয়ে সকলকে মুগ্ধ করলেন রানাঘাটের রানু মন্ডল।

বয়সের ভারে শরীরে ছাপ পড়েছে। তবে কন্ঠ একটুও কাঁপেনি। সুরেলা কন্ঠে সুমধুর গান গেয়ে ভাইরাল হল তার এই গানও। পরিচর্যার অভাবে মুখের চামড়া গেছে কুঁচকে। এলোমেলো চুল, উস্কোখুস্কো মাথা। বোঝাই যাচ্ছে নিজের যত্ন আত্তি না করায় এমন দুর্দশা তার। একাকিত্বের এই জীবনে পাশে নেই কেউ। পরিবার-পরিজন মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে তার থেকে। তবুও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই কোনো রকমে চলছে তার জীবন।