



সন্তান যদি মূলধন হয় তবে নাতি নাতনিরা হল সুদ তাই দাদু-ঠাকুমার কাছে সব নাতিনাতনিরাই নয়ণের মণি। বাবা মায়ের চোখ এরিয়ে,




তাঁদের হাতে টাকা গুঁজে দেওয়ার নিয়মটা দেশী পরিবারে রয়েইছে। হাসি হাসি মুখে “না নেবো না” জাতীয় ছদ্ম প্রত্যাখ্যান চিনেই সেই টাকা দেওয়ার,




জোর আরও দ্বিগুন করে ঠাকুমা দাদুরা। এ তো গেল আদর আব্দারের পর্ব, কিন্তু যদি নাতি নাতনির গোটা দায়িত্বই এসে পড়ে বৃদ্ধাবস্থায়?
তাহলে সমীকরণটা একটু পাল্টে যায় বইকি। তখন আর তা আহ্লাদ নয়, বরং দায়িত্ব। আর সেই দায়িত্বই পালন করছেন মুম্বাইয়ের আটোচালক দেসরাজ। বয়স ৭০ হতে যায়, কেবল নাতি নাতনিদের মুখ চেয়ে নিজের সর্বস্ব মায় বাড়িটাও বিক্রি করে দিয়েছেন পালকপিতা দাদু। রাত কাটাচ্ছেন অটোতে। একসময় ছেলে বৌ নাতি নাতনি নিয়ে ভরা সংসার ছিল দেসরাজের। কিন্তু ঘটনার সুত্রপাত ৬ বছর আগে। একদিন হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায় বড়ছেলে। প্রচুর খোঁজাখুঁজি হল, থানাপুলিশ হল, হলনা শুধু সুরাহা। একরাতে তাঁর মৃতদেহের খোঁজ মিলল। চল্লিশ বছরের লোকটা চলে গেল, ফেলে রেখে গেল তিন ছেলেমেয়েকে। এরপর হঠাৎই ট্রেন দূর্ঘটনায় মারা পড়ে ছোটো ছেলেও। পাঁচ জন বাবাহারা নাতি নাতনির দায় এখন দেসরাজের মাথায়। নাতিদের আকুতি, “দাদাজি, এ বার কি আমরা পড়াশোনা ছেড়ে দেব?” দেসরাজ নির্বিকার। জানায়, “কখনও না । যতদূর ইচ্ছা পড়াশোনা চালিয়ে যাও । আমি আছি।”
এরপরেই শুরু বিধাতাকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই। সকাল সাতটায় অটো নিয়ে বেড়িয়ে পড়া, ফেরা মাঝরাতে। মাসিক হাজারদশেক ইনকাম। মন্দার বাজারে বোম্বাই শহরে চলার পক্ষে এ নেহাত খুদকুড়ো। যে বয়সে আরাম করে সকলে, নাতিনাতনির পড়াশোনার জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছে দেসরাজ। তবে সে কষ্ট উবে যায় যেদিন নাতনি এসে জানায়, উচ্চমাধ্যমিকে সে ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। সে দিন বিনেপয়সায় সওয়ারি করিয়েছে দেসরাজ। নাতনির ইচ্ছে বিএড করার। তাই শহরের বাইরে যাবে। হোস্টেলে থাকবে। টাকার টানাটানি। নিজের বসতবাড়িটাই বেচে দিলেন তিনি। বাকি নাতিনাতনি ও স্ত্রীকে পাঠিয়ে দিলেন গ্রামের বাড়ি। নিজে রাত কাটাচ্ছেন অটোয় শুয়ে। তাঁর এই গল্প পোস্ট করেছে হিউম্যানস অফ বম্বে নামক ফেসবুক পেজ। মুহুর্তে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে পোস্টটি।