সুইস ব্যাংকে টাকা জমা করা মানেই কালো টাকা নয়, জানাল কেন্দ্র

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও গত ১৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে ২০২০তে সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের জমানো টাকার পরিমান ২০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। মাত্র এক বছরের মধ্যেই ২৮৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে অর্থের পরিমাণ।

শুক্রবার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের বার্ষিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে এই খবর বেরিয়েছিল। শনিবার সেই মিডিয়া রিপোর্ট কেন্দ্র অস্বীকার করেছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের দাবি, ওই আমানত সম্পর্কে সুইস কর্তৃপক্ষের কাছে বিশদ তথ্য চাওয়া হয়েছে।

সুইস ব্যাংকে জমা বিপুল অঙ্কের টাকার সবটাই কি কালো টাকা? সংবাদমাধ্যমের এই ইঙ্গিতকে উড়িয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অর্থমন্ত্রক জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে মোট আমানতের হিসেব হলো এই অর্থ।

এতে সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের কালো টাকার পরিমাণ আন্দাজ করা যায় না। সুইস ব্যাংকে জমা পড়া অর্থ মানেই কালো টাকা নয়। এই যুক্তি মানতে চাইছে না বিরোধীরা। ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী কালো টাকা ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছিলেন।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর থাকাকালীন আশ্বাস দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ১৪এর লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সুইস ব্যাংক থেকে সব কালো টাকা ফিরিয়ে এনে প্রত্যেক ভারতীয়র একাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।

কিন্তু এবার যেন উল্টোপুরাণ। কংগ্রেস জানিয়েছে, সুইস ব্যাঙ্কে এই বিপুল আমানতের প্রকৃতি এবং কারা তা জমা করেছেন, সেই ব্যক্তি বা সংস্থার নামের কেন্দ্রের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হোক। গত সাত বছরে মোদি সরকারের আমলে সুইস ব্যাংক থেকে কত পরিমান কালোটাকা শেখানো হয়েছে তার হিসাব চাইছে বিরোধীরা।

যদিও অর্থ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জমা পড়া বিপুল অঙ্কের অর্থের পরিমানের কথা অস্বীকার করা হয়নি। এক বিবৃতিতে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “১৮ জুন বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,

২০১৯-এর শেষে যা ছিল ৬,৬২৫ কোটি টাকা, ২০২০-র পরে তা-ই দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭০০ কোটি টাকায়। এই জমার অঙ্ক ব্যাক্তিগত, সংস্থা ও ট্রাস্ট মিলিয়ে।”

সুইস ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে জমা পড়া অর্থ কমলেও বন্ড, সিকিউরিটি বাবদ এবং আরও নানা ভাবে সুইস ব্যাঙ্কে জমা পড়া অর্থের পরিমাণ প্রচুর। অন্য ব্যাংকের মাধ্যমে সুইস ব্যাংকে টাকা জমা করার ব্যাপার রয়েছে।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১১, ২০১৩ এবং ২০১৭ ছাড়া ভারতীয়দের আমানতের পরিমাণ ক্রমেই কমেছে। তাহলে হঠাৎ এক বছরে কি এমন হল যে অর্থের বাড়বাড়ন্ত হলো?

অর্থমন্ত্রক জানায়, এতে কালো টাকার পরিমাণ বোঝা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগত স্তরে ২০১৯-এর তুলনায় ২০২০-তে সুইস ব্যাঙ্কে জমা অর্থের পরিমাণ ৩৯ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যাঙ্ক অফ ইন্টারন্যাশন্যাল সেটলমেন্টের তথ্য। যদিও কংগ্রেসের কটাক্ষ, এই কালো টাকাকি সবই মোদির বন্ধুদের!

অর্থ মন্ত্রকের দাবি, এই আমানত হিসাব বহির্ভূত নাও হতে পারে। অর্থ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে সুইৎজারল্যান্ডের সঙ্গে দুটি চুক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সেই চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে দুই দেশের মধ্যে কর ও অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত অটোম্যাটিক এক্সচেঞ্জ অফ ইনফরমেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়। তারপরেও সুইস ব্যাংকে ভারতীয়দের অর্থের পরিমাণ দুশো শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেল তার কোনো বিবৃতি দেয়নি কেন্দ্র।